বাস্তবেই আপনি কি মনে করবেন জানি না।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কুয়েত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন বা ওমানের কোন শহররে ঘটনা নয়, শত শত বছর ধরে চলমান এই বাস্তব ঘটনাটি হচ্ছে ফিলিস্তিনের ছোট একটি শহরের, যেই শহরের নাম হচ্ছে মদীনাতু খলীল বা খলীল শহর। এখানে পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত, ঐতিহাসিক ও সুপরিচিত একটি মসজিদ আছে, সেটি "মসজিদে ইব্রাহীম" নামে পরিচিত। মসজিদ সংলগ্ন একটি রেষ্ট হাউস বা মুসাফির খানা আছে। এখানে প্রতিদিন গমগুঁড়া ও গোশত একত্রে মিশিয়ে রান্না করে ঐ দেশের প্রচলিত জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। এখানে প্রতিদিন দুপুর বেলা ৫০০ থেকে ৩০০০ পরিবারের সদস্যরা খুব পরিতৃপ্তির সাথে খাবার খেয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত এই খানা তৈরি ও পরিবেশনের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা যুগ যুগ ধরে কোন ধরনের স্বার্থ বিহিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই শহরের বিত্তবানদের সহায়তায় বছরের প্রতিদিনই এই খাদ্য কর্মসূচি চালু আছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে "সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী" ও পরবর্তী সময়ে "সুলতান কালূন সালেহী" ১২৭৯খৃ: সালে এই মুসাফির খানা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই ঐতিহাসিক সিলসিলা মুসাফির খানা চালু আছে "নবী ইব্রাহিম খলিলের" জামানা থেকেই, তার কারণ "নবী ইব্রাহিম খলিল" মেহমান ছাড়া কোন দিনই খাবার খেতে বসতেন না। তিনি মেহমানদের জন্য অপেক্ষা করতেন।
তাকিয়ায়ে ইবরাহিমী নামে পরিচিত এই খাবার খাওয়ার জন্য দূর দূরান্ত থেকেও শত শত মুসাফির এসে এই যায়গায় সমবেত হয়ে থাকেন। দূর দূরান্ত আগাতো মুসাফিরদের থাকার জন্য এখানে অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউস এ থাকার সুব্যবস্থা আছে। মসজিদে ইব্রাহিমীর সম্প্রসারন ও সংস্কারের জন্য মুসাফির খানা একটু দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং মসজিদটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এখানে খাবার পরিবেশন সহজিকরণ করা ও মানুষের ভিড় এড়াতে আগ্রহী পরিবার গুলোকে একত্রে পাঁচজন লোকের খাবার নেওয়ার মতো বড় পাত্র নিয়ে সকলকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলা হয়ে থাকে। ইব্রাহিম খলিল আলাইহিস সাল্লাম এর মেহমানদারি পাঁচ হাজার বছর ধরে বংশানুক্রমে চলে আসছে। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি পরিবার যদি মেহমানদারির এই সুন্নাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে সচেষ্ট হন, তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হয়তো তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
খলীল শহরের দানশীল ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে আমরা লজ্জিত হবার ভয়ে আপ্রান চেষ্টা করি, আল্লাহর রহমতে কখনো কোন সময় আজও পর্যন্ত কোন অসুবিধা হয়নি।


0 Comments